ব্যাগ থেকে চাবির গোছাটা বের করে ল্যাচে ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে দেয় সঞ্চিতা, হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকেই অবাক হয়ে যায়। হাতে হুইস্কির গ্লাস নিয়ে সোফায় বসে সশব্দে চিপস চিবোচ্ছে আবীর।
— “তোমার তো ফিরতে দেরি হবে বলেছিলে আজ? জার্মানির ডেলিগেশনের সঙ্গে ডিনার আছে বলে। বিকেল থেকে তোমার ফোনটাও সুইচড অফ বলছে।” কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামাতে নামাতে জিজ্ঞেস করে সে।
— “আর বোলো না, মিটিং শেষ হতে হতে এমন মাথা ধরে গেল যে বাহানা মেরে পালিয়ে এলাম। মাইগ্রেনটা আবার বেড়েছে মনে হচ্ছে। ওদিকে ফোনের চার্জও শেষ হয়ে গেছে।” হুইস্কির গ্লাসে আর একটা চুমুক মেরে বলল আবীর।
— “বাহ, মাইগ্রেন বেড়েছে আর সেই আনন্দে বাবু বাড়ি ফিরে বরফ দিয়ে হুইস্কি খাচ্ছেন। অসাধারণ।” আবীরের হাত থেকে গ্লাসটা টেনে নিয়ে সোফায় তার পাশে বসে একটা চুমুক দিতে দিতে বলে সঞ্চিতা।
— “আরে হুইস্কিই তো সব রোগের মহৌষধ ডার্লিং। তোমারটাও বানাই?” সঞ্চিতার চুলে বিলি কাটতে থাকে আবীর।
— “নাহ, ডিনার করে খাব।” একটা বড় চুমুক মেরে গ্লাসটা শেষ করে দেয় সঞ্চিতা।
–”ওকে, তুমি বরং ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি খাবারটা গরম করে ফেলি।”
— “থাক, তোমার মাথা ধরেছে, আমিই ফ্রেশ হয়ে এসে করছি।” গ্লাসটা টেবিলে রেখে সোফা থেকে উঠে পড়ে সঞ্চিতা।
তোয়ালে আর কাফতানটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়।
মিনিট পনেরো পরে ফ্রেশ হয়ে কাফতানটা পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আবার একদফা অবাক হওয়ার পালা সঞ্চিতার। ডাইনিং টেবিলে সাজানো তার প্রিয় ড্রায়েড চিলি ল্যাম্ব আর সেজওয়ান নুডলস।
–” কি ব্যাপার আবীর বাবু, আজ একটার পর একটা চমক দিচ্ছেন দেখছি।” তোয়ালেটা রেখে আবীরের পেটে হালকা একটা খোঁচা মেরে একটু রোম্যান্টিক গলায় বলে সঞ্চিতা।
— “কি আশ্চর্য, চমকের কি আছে ম্যাডাম? তাড়াতাড়ি চলে এলাম, ফ্রিজে দেখলাম সেই চিকেন রাখা। তাই ভাবলাম আজ বৌকে একটু ভালমন্দ খাইয়ে খুশি করা যাক। ব্যস ভাবামাত্রই অনলাইনে অর্ডারটা করে দিলাম”
— “তাই বুঝি?” আলতো করে আবীরের গলাটা জড়িয়ে ধরে ঘন গলায় বলে সঞ্চিতা।
— “হ্যাঁ ম্যাডাম, আকাশটা দেখেছো? বৃষ্টি নামবে নামবে করছে। এমন ওয়েদারে বৌকে খুশি না করলে হয়?” সঞ্চিতার নাকে নাকটা ঘষতে থাকে আবীর। ধীরে ধীরে তার ঠোঁট নেমে আসে সঞ্চিতার ঠোঁটে। নরম একটা চুমু রাখে। “চলো এবার খেয়ে নিই, নাহলে সবেতেই দেরী হয়ে যাবে।” দুষ্টুমির গলায় বলে সে।
হাসতে হাসতে খেতে বসে দুজনেই। খেতে খেতে রোজকার মতই অফিসের কথা, কলিগদের নিয়ে কথা চলতে থাকে টুকটাক। মিটিংয়ে কি হল কলকল করে বলে যায় আবীর। খাওয়া শেষ করে উঠে একটা সিগারেট ধরিয়ে দুটো পেগ বানায় আবীর। সঞ্চিতা বাসনগুলো গুছোতে থাকে।
কাজ শেষ করে দুজনে গ্লাস হাতে ব্যালকনিতে চলে আসে। বাইরে ততক্ষণে ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে গ্লাসে চুমুক দেয় দুজনেই। বহুদিন পর হঠাৎ করেই গান ধরে আবীর। “ফির শাওন রুত কি পবন চলি, তুম ইয়াদ আয়ে”। আবীরের গানের গলা সত্যিই ভাল।
— “কেন যে গানটা ছাড়লে তুমি, এত ভাল গলা তোমার।” গ্লাসে একটা ছোট চুমুক দিয়ে বলে সঞ্চিতা।
— “গান ছাড়লাম, কারণ এখন আমার অন্যকিছু ধরতে ইচ্ছে করছে।” একহাত দিয়ে সঞ্চিতার কোমরটা ধরে নিজের কাছে টেনে নিতে নিতে বলে আবীর।
— “আবীর, এটা ব্যালকনি। প্লিজ…” একটু লজ্জা পেয়ে বলে সঞ্চিতা।
— “হোক না, নিজের বউকেই ভালবাসছি তাও আবার নিজের বাড়িতে। কার বাবার কি।”
— “বাপ রে, আজ হল কি তোমার… বউয়ের প্রতি ভালবাসা যে একেবারে উথলে উঠছে দেখছি।”
— “একটাই তো বউ আমার, ভালবাসবো না।” সঞ্চিতার ঘাড়ের কাছে মুখ ঘষতে ঘষতে বলে আবীর। তার গরম নিঃশ্বাসে সঞ্চিতার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। তারপর ক্রমশ তার মুখ চলে আসে সঞ্চিতার মুখের কাছে। গভীর আবেগে তার স্বাদ নিতে থাকে সে। বৃষ্টিমাখা সেই আলগা ঠাণ্ডার মধ্যে পরস্পরের উষ্ণতায় ডুবে যেতে থাকে দুজনে। চোখ বুজে পরম আবেশে নিজেকে সঁপে দেয় সঞ্চিতা। ভেজা ভেজা তীব্র নিঃশ্বাস, নিকোটিনের পুরুষালি গন্ধটায় অবশ হয়ে আসে সে। দুহাত দিয়ে সঞ্চিতার কোমরটা ধরে আরও কাছে টেনে নেয় আবীর। আর তখনই ঘামের গন্ধটা নাকে এল সঞ্চিতার। ঘামের গন্ধ একদম সহ্য হয়না তার। আবীরকে একটা হালকা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে সে বলে,
— ইশশ… ফিরে এসে ফ্রেশ হওনি নাকি, গায়ে ঘেমো গন্ধ। যাও স্নান করে এস।”
— “যো হুকুম ম্যাডাম। এক্ষুণি যাচ্ছি। তুমি গ্লাসটা শেষ করো, আমি ব্যস ৫ মিনিটে আসছি।” সঞ্চিতার দিতে তাকিয়ে চোখ মেরে একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে আবীর। হাতের গ্লাসটা এক চুমুকে শেষ করে তোয়ালেটা হাতে নিয়ে বাথরুমে চলে যায় সে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হুইস্কি খেতে খেতে বাথরুমে শাওয়ার চালু হওয়ার শব্দ পায় সঞ্চিতা। স্নান করতে করতে গুণগুণ করে গান গাইছে আবীর, “ফির শাওন রুত কি পবন চলি…”
ভাললাগা আবেশে সঞ্চিতার শরীরটা মথিত হয়ে আসছে ক্রমশ।
টিং টং টিং… আবেশটা ভেঙে যায় মোবাইলের রিংটোনে। তার ফোনটা বাজছে। ঘরে গিয়ে ফোনটা তুলে দেখে আননোন নম্বর থেকে ফোন। নেট অফ থাকায় ট্রু কলারও কাজ করছে না। এতরাতে কে ফোন করল রে বাবা.. বিরক্ত হয়েই ফোনটা ধরে সে।
–”হ্যালো হ্যালো.. হ্যাঁ সঞ্চিতা.. শুনতে পাচ্ছো… আরে আবীর বলছি.. শুনতে পাচ্ছো…হ্যালো…আরে বিকেলে তোমার সঙ্গে কথা হওয়ার পর আমার ফোনটা বাথরুমে জলে পরে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেল। কিছুতেই অন হচ্ছে না। তোমার নম্বরটাও পুরো মনে নেই। ভাগ্যিস সুবীরের ফোনে সেভ করা ছিল তোমার নম্বর, তাই ওর ফোন থেকে কল করছি। যাক গে শোনো, আজ রাতে আমি ফিরতে পারবো না। পার্টি শেষ হতে হতে ভোর হয়ে যাবে। আমি সুবীরের বাড়িতেই থেকে যাব। তুমি ভাল করে সব লক করে নিও। কি গো শুনতে পাচ্ছো… আরে এই কিছু তো বলো… হ্যালো.. সঞ্চিতা… আর ইউ ওকে.. হ্যালো…”
সঞ্চিতার শরীর শক্ত হয়ে গেছে… ফোনের ওপারে যদি আবীর হয়ে থাকে তাহলে বাথরুমে কে…
আচমকা গোটা ফ্ল্যাটের আলো নিভে যায়। শুধু বাথরুম থেকে ভেসে আসতে থাকে শাওয়ারের শব্দ আর গুণগুণ সুরে গান…” ফির শাওন রুত কি পবন চলি, তুম ইয়াদ আয়ে…”
বাইরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমেছে…
Story: Ringtone
By Pamela Bhattacharya
August 22, 2019 — magnon